কাক ডাকা ভোর

বাংলা ভাষা (ফেব্রুয়ারী ২০১৩)

বশির আহমেদ
  • ৩৫
সকাল ছটার ট্রেনটা চলে গেল। অনন্যা জানালার পর্দাটা তুলে বাইরে তাকাল। প্রতি দিনের মত আজও মিলের ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। কয়েক দিন আগে হঠাৎ করে মিলটি বন্ধ হয়ে গিয়ে ছিল। মিলের শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে কাজল কে ঘেরাও করে ছিল। কাজল মিলের ম্যানেজার। কর্তৃপক্ষের মৌখিক আশ্বাসে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়। অনন্যা আজ চার বছর যাবত দেখছে সকালের ট্রেনটা নিয়ম করে চলে যায়। মিলের ধোয়া উড়ে। কাজল সকাল ১০টার মধ্যে নাস্তা সেরে অফিসে যায়, দুপুরে এসে খাবার খায় আবার অফিসে যায়।

গত কয়েক দিন ধরে এর ব্যতিক্রম দেখল অনন্যা। একটা কাক কয়দিন যাবত বাসার কার্নিশে এসে বসছে। বিচ্ছিরি শব্দে ডাকছে। তারিয়ে দিলেও সে পুনরায় এসে বসছে। আজ ভোর থেকে মিলের ধোয়া দেখা যাচ্ছেনা । ট্রেনটা কখন চলে গেছে খেয়াল করেনি অনন্যা। অন্য দিনের মত কাজল ঘুম থেকে উঠে বাগানের পরিচর্যা করেনি।
প্রতি দিনের মত পত্রিকা হাতে খাবার টেবিলে বসেনি। কাকটা আবার ঘরের দিকে মুখ করে কা-কা করে ডাকতে শুরু করেছে। কাজল বিরক্ত হয়ে কাকটাকে তারা করল। কাকট দেখতে কি বিচ্ছিরী। তারা খেয়ে কাকটা রেল লাইনের উপর গিয়ে বসল। রেল লাইনের পাথরের ভিতর কি যেন খুঁজে পেয়ে খুটে খেতে শুরু করেছে। কাজল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাকটি দেখছে। অনন্যা জানলার পর্দাটা ফেলে দিয়ে কাজলের পাশে এসে দাড়ায়। আরেকটা ট্রেন আসছে দুর থেকে ট্রেনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বাইরে ফেরিওয়ালার হাঁক ডাক । মিলে জয়েন করার কিছু দিনের মধ্যে রেল লাইনের পাশের এই বাংলোটিতে উঠে এসেছে। দ্বিতল এই বাংলোটিতে মোট পাঁচটি ঘর। সামনে প্রশস্ত বাগান। মালী এসে রোজ বাগানের পরিচর্যা করে। কাজল ও অনন্যা মাঝে মধ্যে নিজ হাতে বাগানে ফুল গাছে হাত লাগায়। এক কোনে বিশাল গ্যারেজ। প্রথম প্রথম গাড়ী না থাকায় গ্যারেজটি খালি পড়ে থাকতো। অফিসের কাজে কাজল জাপান গিয়েছিল। তখন টয়োটা গাড়ীটি বুকিং দিয়ে আসে। অল্প কিছুদিন পরই গাড়ীটি চলে আসে।

কাজল এবং অনন্যা একই ক্লাসে পড়তো। কাজল ছিল মেধাবী ছাত্র। একদিন ক্লাসের ফাঁকে কাজলের সাথে আলাপ পরিচয়। ক্রমন্বয়ে কাছে আসা ভালবাসা । টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর পরিণয়। পাঁচ বৎসর সংসার জীবনে সুখের কমতি নেই। তবে এখনো কোলে কোন সন্তান আসেনি।

দ্বিতীয় ট্রেনটা চলে গেল অনন্যা তাকিয়ে রইল। কাজল এখনো বসে আছে। রেল লাইন দিয়ে দুটো লোক হাত ধরাধরি করে হেটে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে লাইন থেকে পড়ে যাচ্ছে আবার উঠে দাঁড়াচ্ছে। কাকটা আবার কার্নিশে এসে বসেছে। বিচ্ছিরি শব্দে ডেকে যাচ্ছে। উঠে দাঁড়াল কাজল অনন্যাকে ডাক দিল। ডাক শুনে তাকাল অনন্যা কাজল হাসছে। আবার ডেকে উঠলো কাকটা । কাজল বলল এবার অফিসে যাই বলেই ওয়াস রুমে ঢুকে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা খেয়ে বেড়িয়ে পড়ল। কাকটা আবার ডেকে উঠলো।

কাজল চলে যাওয়ার পর অনন্যার বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ।আজ মিলের সাইরেন বাজেনি। রান্না ঘরের পর্দা তুলে দেখতে পেল দুটি যুবক কাছ দিয়ে হেটে যাচ্ছে । কেন যেন আজ অনন্যার ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। কিছুক্ষণ পর পর অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে । মিলে নাকি কাজ কর্ম হচ্ছেনা । শ্রমিক দের দাবী দাওয়া কর্তৃপক্ষ এখনো মেনে নেয়নি। অনন্যার ভীষণ ভয় লাগে । কাজল অফিসে গেলেই মনটা আনচান করে উঠে । কেমন যেন সারাটা শরীর ছমছম করে উঠে। বাড়ীতে নিঃসঙ্গ মনে হয়। সে দিন কাজল বলল সে আবার ঘেরাও হতে পারে। ওরা তার কথা বিশ্বাস করছেনা। কাজলতো মাত্র একজন কর্মচারী, মালিক দাবী অনুযায়ী টাকা পয়সা না দিলে তার কি করার আছে। তবু বারবার তাকে শ্রমিক দের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কাজল গাড়ী নিয়ে চলে গেছে। হাতে কোন কাজ নেই। সময়টা একদম কাটতে চাচ্ছেনা।

অলস হাতে এ্যালবামটা তুলে নিল। কত ছবি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কালীন বহু স্মৃতি উঠে আসছে। কাজলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল তুহিন। সে ছিল কবি স্বভাবের। মাঝে মধ্যে কাজল আর অনন্যাকে নিয়ে কবিতা লিখতো ।অনেক গুলো ছবিও তুলে ছিল। কাজলের মুখে শুনেছে তুহিন বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের সে একজন সক্রিয় সদস্য । সে কবেকার স্মৃতি:-
পূজার ছুটি। বিশ্ববিদ্যালয় এক সপ্তাহের বন্ধ। কাজল দেশের বাড়ী যাবে। অনেক দিন দেশের বাড়ী যাওয়া হয় না। কাজলের সাথে তুহিনও যাবে। তুহিন বলল-চল অনন্যা দিনাজপুর থেকে ঘুরে আসি। অনন্যা বান্ধবী শাহিনাকে রাজি করাল। ঠিক হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সফরের কথা বলে বাড়ী থেকে বের হবে। তুহিন বাসের টিকিট জোগাড় করবে।
শনিবার দিন রাত দশটায় কলা বাগান থেকে বাস ছাড়বে। পৌনে দশটার মধ্যে কলাবাগানে সবাই হাজির। ঠাকুরগাঁও গামী বাসে চড়ে বসল। বাস যখন সৈয়দপুর এসে পৌঁছল তখন পূর্বাকাশ ফর্সা হয়ে উঠছে। ভুষিরবন্ধর পৌছাতে পৌছাতে রক্তিম সূর্য পূর্ব দিগন্তে উকি দিতে শুরু করেছে। দশ মাইল পৌছাতে না পৌছাতে উত্তর পশ্চিম দিক থেকে একটা কালো মেঘ সমস্ত আকাশটা ঢেকে দিল। সকাল বেলাটা যেন অমাবস্যায় গ্রাস করল। শুরু হল বৃষ্টি। তারা যখন বাস থেকে বীরগঞ্জ বাজারে নামতে যাবে তখনো অঝোর ধারা ঝরছে। বীরগঞ্জ বাজারের দোকানপাট বন্ধ। নেমে কোথাও দাঁড়াবার জায়গা নেই। অগত্যা হাটুরেদের একটি খোলা কুড়ের চালা ঘরের পাশে নামল।
বাস থেকে নেমে চালায় ঠাঁই নিতে নিতে সাড়া গা ভিজে গেল। চারি দিকে গুড়ুম গুড়ুম দেয়া ডাকছে। কাছা কাছি কোথায় যেন বজ্রপাত হলো। আগুনের কুণ্ডলী যেন তাদের গা ছুঁয়ে গেল। শাহিনা ভয় পেয়ে ও মাগো বলে অনন্যাকে জড়িয়ে ধরল।
কাজল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রিকসাভ্যানের খুঁজে নেমে পড়ল। প্রায় আধা ঘণ্টা পর ছই দেয়া একটি রিকসা ভ্যান নিয়ে হাজির। বৃষ্টি ধরে আসার কোন লক্ষণ নেই। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই অনন্যারা ভ্যানে চড়ে বসল। ভ্যানটি বাজার থেকে উত্তর মুখী ছুটে চলছে। দমকা বাতাসে বৃষ্টির ঝাপটা এসে বার বার তাদের ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এক সময় ভ্যানটি করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরের বাঁধের উপর দিয়ে এগিয়ে চলছে। বাঁধের দুই ধারে নাম না জানা অসংখ্য গাছ পালা। নদীর পাড় ঘেঁষে কাশবন। বৃষ্টিতে কাশবন সেজদার মত নতজানু হয়ে আছে। নদীর পানি দ্রুতবেগে কলকলিয়ে ভাটির দিকে ছুটে যাচ্ছে। বাধের অপর প্রান্ত লোকালয় শূন্য সবুজ ফসলের মাঠ।
বৃষ্টি কিছুটা ধরে এসেছে। আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করল। ভ্যান থেকে নেমে তুহিন আর কাজল সামনে অনন্যা আর শাহিনা পেছনে পা ঝুলিয়ে বসে পড়ল। আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল। পশ্চিম দিগন্তে বিশাল রঙধনু ফুটে উঠেছে। কে বলবে কিছুক্ষণ আগেও আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। মেঘগুলো কোথায় উদাও হয়ে গেল। চারি দিকে সবুজ শ্যামল প্রকৃতি। নির্মল বাতাস। বাতাসে সুধামাটির গন্ধ। কাশবন মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। সূর্যের আলোতে সাদা কাশবন চিক চিক করে উঠছে।
প্রায় দেড়র ঘণ্টা জার্নি শেষে তারা খানসামা খেয়া ঘাটে এসে নামল। করতোয়া ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ঘাটে তিনটি ডিংগী নৌকা। মাঝিরা নৌকা গুলি বড় বড় গাছের সাথে বেধে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বার বার ছুটে যাচ্ছে। উজান থেকে পানি দ্রুতবেগে ছুটছে। ঘাটের কাছে নদীটা কিছুটা বাঁক নিয়েছে। ফলে পানির স্রোত এখানে ঘূর্ণি পাঁকের সৃষ্টি করছে। ঘাটে একটি মাত্র চা পান বিড়ির দোকান। দোকানী সবেমাত্র দোকানের ঝাপ খুলে মাটির চুলায় আগুন ধরাতে ব্যস্ত । গোবর ঘৈ দিয়ে চুলাই আগুন ধরিয়ে চা এর ক্যাটলিতে পানি ঢালছে। দোকানের সামনে বাঁশের শলাকা দিয়ে তৈরি একটি বেঞ্চ পাতা। তারা বেঞ্চে গিয়ে বসল। দোকানে খাওযার তেমন কিছু নেই। স্থানীয় বেকারির তৈরি কিছু বিস্কিট আর চাঁপা কলা। তাই দিয়ে তারা কোন রকম নাস্তা সারল।

দোকানী স্থানীয় ভাষায় জানতে চাইল- তোমরা কোনটে যাইবেন বাহে?
কাজল জবাব দিল- গোবিন্দপুর।
আবার জানতে চাইল-কার বাড়িত যাইবেন বাহে?
কাজল বলল- সরকার বাড়ী।
দোকানী জানাল এখন যাওয়া যাবেনা বাহে । নদী শান্ত হতে সময় লাগবে। অগত্যা তারা অপেক্ষা করতে থাকল।
শাহিনা দোকানীর কাছে প্রশ্ন করল- এই নদী কোথা থেকে আসছে চাচা?
দোকনী বলল- তাতো জানিনা বাহে। তয় ভারত থেকে এসে ঢুকেছে।
করতোয়া ভারতের শিলিগুড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে দিনাজপুর হয়ে আবার ভারতে ঢুকেছে। পুনরায় বাংলাদেশের নওগাঁ হয়ে পদ্মা যমুনায় মিশেছে।
দোকানী জানাল ঐযে দুরে উজানে গ্রাম গুলি দেখা যায় এর পশ্চিম পাড়ে পঞ্চগড় আর পূর্ব পাড়ে নীলফামারী জেলা।
আলাপে আলাপে অনেক সময় কেটে গেল। নদীর স্রোতের তীব্রতা কমে এসেছে। এদিকে ক্ষিধায় পেট চু চু করছে। আরোও ঘণ্টা খানিক পর নদীর পানি ও স্রোত কমে এলো। একজন মাঝি নৌকা ছাড়তে রাজি হল।
সবাই নৌকায় উঠে বসল। নদীর ওপারেই খানসামা বাজার ঘাট। মাঝি নৌকা বাঁধের তীর ঘেঁষে উজানের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। প্রায় এক কিলোমিটার উজানে গিয়ে মাঝি কোনা কোনি হাল ধরল। স্রোতের টানে নৌকা এসে বাজার ঘাটের একশ গজ দক্ষিণে ভিড়ল।
বেলা তখন প্রায় চারটা। নৌকা থেকে নেমে বাজারে হোটেলে ঢুকে পড়ল। হোটেল থেকে ক্ষুধা নিবৃত করে কাজলদের বাড়ী এসে পৌছাতে পৌছাতে পাঁচটা বেজে গেল। বাড়ীটির চারপাশে সবুজ শ্যামল ধান ক্ষেত। দুর থেকে বাড়ীটি খামার বাড়ী বলে মনে হয়। বাড়ীর ভেতর দুই সারি অসংখ্য ঘর। মাঝ খানে বিরাট উঠান। উঠানের এক কোনে স্তুপিকারে ধান তোলার সরঞ্জামাদি।
বাড়ীর সামনে বিশাল পুকুর। পুকুর পাড়ে আম, জাম ,নারকেলসহ বিভিন্ন ফল ফলাদির গাছ। বাড়ীর সামনে পেছনে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। যে দিকে চোখ যায় সবুজ ধানক্ষেত আর ধানক্ষেত।
অনন্যা আর শাহিনা পুকুর পাড়ে বসে গেয়ে উঠল-ধন ধান্যে পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা ---------।

পর দিন কাজলের চাচা পুকুরে জাল ফেলল। অনন্যা শাহিনা আর তুহিন পুকুর পাড়ে দাড়িয়ে জাল টানা দেখছে। জাল চারদিক থেকে টেনে এক পাড়ে জড়ো করতে শুরু করল। শত শত ছোট বড় মাছ লাফাতে লাগল। এ এক অভুত পুর্ব দৃশ্য।
শাহিনা আর অনন্যা শহুরে মেয়ে। মাছ ধরার এ দৃশ্য কোন দিন দেখেনি। তারা চপলা কিশোরীর মত আনন্দে নেচে উঠে ছিল। কৈ, মাগুর, সিং সহ অসংখ্য ছোট ছোট মাছে খলই ভরে গেল।
বাড়ীতে ছোট বড় সব মেয়ের দল মাছ কুটতে বসে পড়ল। দেখা দেখি শাহিনা অনন্যা হাত লাগাল।
তিন দিন গ্রামের বাড়ীতে বেড়িয়ে চতুর্থ দিন তারা দিনাজপুর শহরের পথে রওয়ানা হল।
করতোয়া নদী পাড়ে এসে তুহিন,শাহিনা,অনন্যা অবাক। সেই দিনের ভরা যৌবনা করতোয়া কোথায় ? এ যে দেখি জীর্ন শীর্ণ এক মরা নদী। ছোট্র একটি ক্ষীন ধারা বয়ে চলছে। দুই পাশে দীর্ঘ বালিয়ারী। শিশূতোষ পাঠ্য সেই বিখ্যাত কবিতার চরন মনে পড়ল-


আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ী
দুই ধার উচু তার ঢালু তার পাড়ি।
চিক চিক করে বালি কোথা নাই কাদা
দুই ধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।

দিনাজ পুর শহরে এসে তারা কাজলের ফুফুর বাড়ী উঠল। বিকেলে গেল রামসাগর দিঘী। বিশাল দিঘি। দিঘির চার পাশে শালবন। দিঘির জল স্বচ্ছ কাচের মতন। দিঘির জলে পা ডুবিয়ে বসল। পানি বেশ শীতল। সন্ধ্যা অবধি তারা দিঘির পাড়ে বসে ছিল।
পরদিন সকাল বেলা তারা কান্তজির মন্দির গেল। সারা দিন ঘুরে ঘুরে দিনাজপুরের দর্শনীয স্থান সমুহ দেখে রাতের বাসে ঢাকায় ফিরেএসেছিল।

তুহিনকে আর কোন দিন দেখা যাবেনা । উচ্চ শিক্ষার জন্য সে রাশিয়া পাড়ি জমিয়ে ছিল । শুনা গিয়েছিল সে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে রাশিয়ায় ছড়িয়ে দিতে সেখানে বাংলা সাহিত্য চর্চা কেন্দ্র চালু করে ছিল । বাঙলাকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করার লক্ষ্যে ইউরোপের অন্যান্য দেশে বস বাস রত বাঙলা ভাষাভাষীদের উদ্বুদ্ধ করার কাজ করতে জার্মানী যাবার পথে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তুহিন সেখানেই মৃত্যু বরন করে ছিল।তারই দেখানো পথ ধরে বাংলা আজ বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে ।
মনে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কালীন একদিন কাজল ও তুহিন অনন্যাদের বাসায় গিয়ে ছিল। কথায় আচরনে তুহিনকে তার মা খুব পছন্দ করে ছিল। তার কিছুদিন পরই তুহিন রাশিয়ায় পাড়ি দিয়ে ছিল । আর কোন দিন দেখা হয়নি। তুহিনের একটি কবিতা অনন্যার আজও মনে পড়ে---

শান্তি অন্বেষায় প্রত্যয়ী মানব
পথে পথে কেন যে ফের
খ্যাপা যেমন খুঁজে. পরশ পাথর
ঘরের ভেতর লুকিয়ে রতন,
কেন প্রবঞ্চনায় নিজেকে ভুলাও ?

বড্ড ঘুম পাচ্ছে অনন্যার চোখ যেন জড়িয়ে আসছে। বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিল। ঘুম যখন ভাঙ্গল তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। কাজল এখনো এলনা কেন? অফিসে ফোন করল অনন্যা কোন সাড়া শব্দ নেই। অনন্যার আশঙ্কা হচ্ছে লাইন কেটে দিয়েছে নাকি? পর্দা তুলে তাকাল পুরো মিল এলাকা নিরব নিথর। কাকের কা-কা ডাক শুনে নিজেদের বাগানের দিকে তাকাল অনন্যা। কাকটা কার্নিশে এসে বসল। আবার ডাকতে শুরু করল। কাজল বাসায় থাকলে কাকটাকে তাড়িয়ে দিত। মালিটাও এখন আর আসবেনা। অনন্যা কাকে দিয়ে খবর নিবে। অপেক্ষায় অপেক্ষায সারা রাত কেটে গেল। ভোর রাতের দিকে চোখে তন্দ্রা এসে গেল। টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিযে গেল।

সকালের ট্রেনটা চলে গেল --------। কামালের কবি কন্ঠ---------। মিলের শ্রমিকদের ঘেরাও----------।
কাজল সিগারেট টানছে আনমনে------------। সামনে চায়ের কাপ---------। কাজলের চারপাশে অসংখ্য শ্রমিক-------। এক সময় ফিরে গেল লোক গুলো। আবার ফিরে এল। একটা ধারাল ছুড়ি নেমে এল। কাজলের নিথর দেহ পড়ে আছে রেল লাইনের পাশে।

তন্দ্রা কেটে গেল অনন্যার। সকাল হয়ে এসেছে পর্দা তুলে তাকাল। বাগানে উড়ে এসে সেই কাকটা বসেছে। একটা দেহ দেখা যাচ্ছে বাগানে। চমকে উঠলো অনন্যা । মানুষের দেহ পড়ে আছে বাগানে। দরজা খুলে দেহটা দেখে চিৎকার করে উঠলো অনন্যা। এ যে পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছে। অনন্যা মনে করতে লাগল। হ্যা মনে পড়েছে। এই লোকটাকে ই তো গত কয়দিন যাবত রেললাইন দিযে হেটে যেতে দেখেছে। সে এখানে এল কি করে। কাকটা উড়ে গেল। একটা চোখ খেয়ে ফেলেছে। গড়িয়ে গড়িয়ে রক্ত ঝরছে এখনো। কাকটা কার্নিশে বসে আছে। অনবরত ডেকে যাচেছ। অনন্যার মনঠা কেমন করে উঠল। কাজল কোথায়? কাজলের খুঁজে সে ঘর থেকে বেড়িয়ে কাজলের অফিসের দিকে ছুটে চলল। কাকটা ডেকে চলছে তো চলছে।
কেউ তাড়াল না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বশির আহমেদ গঠন মূলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । ভুলগুলো অসাবধানতা প্রসূত তার জন্য দুক্ষিত ।
ভালো লাগেনি ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
রোদের ছায়া বেশ বড় গল্প , বেশ ভালো লাগলো. তবে বাংলা ভাষা বিষয়টা তেমন আসেনি গল্পে আপনি চাইলে বিষয়ভিত্তিক সুন্দর একটা গল্প আপনাদের উপহার দিতেই পারতেন । আর কিছু বানান হয়তো অসাবধানতায় ভুল হয়েছে ... (কাজলের খুঁজে ,কাকটাকে তারা ,শিশূতোষ ,অভুত পুর্ব , কোনা কোনি এরকম আরও কিছু ছোটখাটো বানান )
ভালো লাগেনি ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
বশির আহমেদ ব্যস্ত মানুষ সময় করে গল্পটি পড়েছেন তার জন্য ধন্যবাদ ভাই ।
ভালো লাগেনি ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
বিন আরফান. খুব ভালো লাগলো.
ভালো লাগেনি ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
বশির আহমেদ গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
ভালো লাগেনি ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
Shamson Naher Sima খুব ভালো একটা গল্প, ভালো থাকবেন
ভালো লাগেনি ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
বশির আহমেদ আপনার সুচিন্তিত মন্তব্য আমায় অনুপ্রানিত ও আন্দোলিত করে । সূর্য ভাই শুভেচ্ছা রইল ।
ভালো লাগেনি ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
সূর্য শেষ প্যারার আগের অংশটুকুতো তন্দ্রায় থাকা অনন্যার স্বপ্ন তাই না! গল্পের বুনট সুন্দর সাবলীল। কাজলের অবস্থান আর বাকি সব কিছু বাস্তবতা থেকেই নেয়া। আশি নব্বই দশকে রাশিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড ইত্যাদি কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলোয় এমন বৃত্তির ব্যবস্থা সত্যিই ছিল। তুহিনের স্বপ্নটা আমাকেও ছুয়ে গেল আর তার হারিয়ে যাওয়াও। শেষটা পাঠকের উপর ছেড়ে দেয়ায় ভালই হল, আমি ভেবে নিলাম অনন্যা মিলে গিয়ে কাজলেক খুজে পেয়েছে এবং জীবিতই পেয়েছে...
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
Lutful Bari Panna কাহিনী যথারীতি দুর্দান্ত। তবে বিষয়টা কিছুটা ইম্পোজ করা মনে হল। তবে আমার কাছে গল্পটাই আসল। আমার কাছে সর্বোচ্চই থাকল বাকি যা ভাবার বিচারকরা ভাববেন।
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
পান্না ভাই অনেক দিন পর পেলাম । কেমন আছেন ? গল্পটা বেশ আগের লেখা এখন একটু জালাই করা হলো এই আর কি । গল্পটা সবার ভাল লাগলেই আমার পরিশ্রম সার্থক । ধন্যবাদ ভাই ।
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
তাপসকিরণ রায় ভালো লাগলো গল্প--কাহিনী কথা ভাব ভাষার ধারাবাহিকতা বেশ ভালো--লেখককে জানাই অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
তাপসদা আপনাদের ভাল লাগা মন্দ লাগাই আমার পরবতী লেখার অনুপ্রেরনা । ভাল থাকুন দাদা ।
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

০৭ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪